গ্লুকোমার একমাত্র চিকিৎসা প্রতিরোধই

গ্লুকোমার একমাত্র চিকিৎসা প্রতিরোধই

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ একে আজাদ ঃগ্লুুকোমাজনিত অন্ধত্বের কোনো প্রতিকার নেই। সচেতনতাসহ প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। গ্লুকোমা চোখের একটি জটিল রোগ। এ রোগে চোখের স্নায়ু ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। এমনকি রোগী অন্ধত্ববরণেও বাধ্য হয়। তবে সময়মতো চিকিৎসা করলে অন্ধত্ব থেকে মুক্তি মেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চচাপ এ জন্য দায়ী।


রোগের কারণ : সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে চোখের উচ্চচাপ এ রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। স্বাভাবিক চাপেও এ রোগ হতে পারে। সাধারণত চোখের উচ্চচাপ ক্রমে চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দৃষ্টি ব্যাহত করে। তবে কিছু কিছু রোগের সঙ্গে এ রোগের গভীর সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায় এবং অন্যান্য কারণেও এ রোগ হতে পারে। যেমন- পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের এ রোগ থাকা। বেশি বয়স।

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। মাইগ্রেন। রাতে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন। দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড সেবন। চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে। চোখের অন্যান্য রোগের কারণে। জন্মগত চোখের ত্রুটি। এগুলোর মধ্যে শুধু চোখের উচ্চচাপ ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।লক্ষণ গুলো : অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এ রোগের কোনো লক্ষণ টের পান না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চোখ পরীক্ষাকালে হঠাৎ করে চিকিৎসক এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলো- ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া। চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রঙধনুর মতো দেখা। ঘন ঘন মাথাব্যথা বা চোখব্যথা হওয়া। দৃষ্টিশক্তি ক্রমে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি কমে আসা। অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোনো পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগা। মৃদু আলোয় কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া। ছোট ছোট শিশু বা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।

গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসা : 
গ্লুকোমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব; কিন্তু নিরাময় সম্ভব নয়। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো এ রোগের চিকিৎসা সারা জীবন করে যেতে হবে। এ রোগে দৃষ্টি যতটুকু হ্রাস পেয়েছে, তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে দৃষ্টি যাতে আর কমে না যায়; তার জন্য আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এ রোগে প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে তা হলো- ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা, লেজার চিকিৎসা এবং শল্যচিকিৎসা।

রোগীর করণীয় কী : চিকিৎসক রোগীর চোখ পরীক্ষা করে চোখের চাপের মাত্রা নির্ণয় করে নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেন, তা নিয়মিত ব্যবহার করা। দীর্ঘদিন একটি ওষুধ ব্যবহারে কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তাই নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। সময়মতো চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা, তার গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করে গ্লুকোমা আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া।

সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে একজন গ্লুকোমা রোগী তার স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারেন। পরিশেষে মনে রাখবেন, গ্লুকোমা অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ; যার কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। তাই চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে আপনার চোখ পরীক্ষা করে চোখের চাপ জেনে নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শও।
লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।

চেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল, (৩য়-তলা) ফার্মগেট, ঢাকা। ০১৫৫২-৪০৯০২৬, ০১৭১০-৭৩৬০০৮

বি আলো ইমরান