শীতকালে ফিজিক্যালি ফিট থাকুন

শীতকালে ফিজিক্যালি ফিট থাকুন

ডা. মো. সাইদুর রহমান (সিনিয়র ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ)  শীতকালে কিছু ঝামেলাবিহীন ব্যায়ামে বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই আমরা  ফিজিক্যালি ফিট থাকাতেই অন্তত কিছু সঠিক উপায় মেনে চলি। বয়স বেশি হলে, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ, হাইপার  রক্তে কলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এই জাতীয় অসুখ থাকলে দীর্ঘদিন হাঁটতে না পারলে বা ব্যায়াম করতে না পারলে সমস্যা আরো বাড়ে। কাজেই শুয়ে-বসে না থেকে দিনভর সচল থাকতে হবে। বাড়াতে হবে ব্যায়ামের পরিমাণও।

* আপনি কী ধরনের ব্যায়াম করবেন?


১. ব্যায়াম বলতে কেউ হয়তো নিয়মিত একটু জোরকদমে হাঁটছেন ছাদে বা ট্রেডমিলে আবার কেউ করেন যোগাসন। কিন্তু তাতে পুরো কাজ কখনও হয় না। ঠিক কী কী করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওয়ার্কআউট হয় তা জানতে হবে।

২. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও শারীরিকভাবে ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে শারীরিক ব্যায়াম করা দরকার। নিয়ম করে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন করতে হবে পেশীর শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম।


৩ শারীরিক এক্সারসাইজ বলতে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বোঝায়। এই লকডাউনে তা করবেন কিভাবে! তাই ট্রেডমিল বা ছাদে হাঁটুন, স্পট জগিং করুন, স্পট স্কিপিং করুন বা স্ট্যাটিক সাইকেল চালান। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন।

৪. সাধ্যমতো জোরে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয়। টানা ২০-৩০ মিনিট। টানা না পারলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকেলে ২০ মিনিট হাঁটবেন। এমন গতিতে যাতে হাঁপিয়ে হলেও দু-চারটে কথা বলা যায়, কিন্তু গান গাওয়া যায় না।

৫. হাঁটু-কোমর-গোঁড়ালির অবস্থা দেখে নেবেন। হার্ট-ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম থাকলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করুন। তবে হাঁটা বা জগিংয়ের আগে ভাল মানের জুতো পরে নেবেন। না হলে পায়ে ব্যথা হতে পারে।

৬. স্ট্রেচিং কী? স্ট্রেচিং কিভাবে করতে হয় তা কমবেশি সবাই জানে। বিশেষ কিছু নয়, শরীরের প্রতিটি পেশীসন্ধিকে সচল রাখার জন্য এই ব্যায়াম খুবই উপকারী। পা-কোমর-শিরদাঁড়ার স্ট্রেচিং এই সময় খুব কাজে আসবে। কোনো ব্যথা-বেদনা বা অস্থিসন্ধি ও পেশীর বড় কোনো সমস্যা না থাকলে করতেই পারেন।

৭. পেশী জোরদার বা মাসল স্ট্রেন্ডেনিং করার ব্যায়াম দু’ভাবে করা যায়। বাড়তি ওজন নিয়ে ও শরীরের ওজনকে ব্যবহার করে। এর মধ্যে বিভিন্ন রকম স্কোয়াটিং আছে, তেমনই রয়েছে লেগ রাইজিং, প্ল্যাঙ্ক, পুশ-আপ ইত্যাদি। তবে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখ আছে বা শারীরিক ফিটনেস কম বা হাঁটু- কোমর ব্যথা আছে এমন মানুষের পক্ষে অভ্যাস না থাকলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তার জন্য উপযোগী ব্যায়াম করা উচিত অন্যথায় তার বিভিন্ন রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। সুস্থরা অবশ্যই করতে পারেন এর সব ক’টি ব্যায়াম।

৮. ইদানীং কয়েকটি নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে যাতে সুরের তালে তালে এ্যারোবিক্সের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, সব হয়ে যায়। সে রকমই একটি হলো টাবাটা। বয়স কম হলে, ফিটনেস থাকলে টাবাটা করা যেতে পারে।

৯.  বেশি বয়সেও ফিটনেস ভাল থাকলে, হাঁটু-কোমর ঠিক থাকলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। যারা জুম্বা করেন এই সময় তা ছেড়ে দেবেন না। জুম্বাতে আপনার শরীর যেমন ভাল থাকবে, মনও হালকা হবে একটু।

১০. ইয়োগা করতে পারেন। এটা সব বয়সী মানুষই করতে পারেন, এটার জন্য স্পেসও খুব কম লাগে তাই বাসার যে কোনো জায়গায় এটা করতে পারবেন। তবে একজন ইয়োগা পারদর্শী ট্রেইনার এর অধীনে থেকে ইয়োগা করলে অধিক রেজাল্ট পাওয়া যায়।

১১. মেডিটেশন- আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি, মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও খুব জরুরি, কারণ এই সময়টাতে আমরা সবাই কোনো না কোনো মানসিক স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, কেউ হয়তোবা শারীরিক, কেউ অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন যা মানসিক স্ট্রেসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাই ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত মেডিটেশন করলে আপনি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন।

এর পাশাপাশি বেশির ভাগ সময় সচল থাকার চেষ্টা করুন। এক জায়গায় টানা বসে থাকার অভ্যাস থাকলে সেটা পরিহার করুন তা না হলে ব্যায়ামের উপকারিতা সঠিকভাবে পাবেন না।

★ব্যায়াম করলে কি হবে?

১, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যাবে

২. হার্ট ও ফুসফুসকে সতেজ রাখে। করোনাভাইরাসের মতো যেকোনো শারীরিক জটিলতা ঠেকাতে যার বড় ভূমিকা আছে।
৩. সুগার-প্রেসার-কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রথম দুটির সঙ্গে যে কোভিড-১৯ এর সম্পর্ক রয়েছে।
৪. হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। হাড় নরম হয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে।

৫. ফিজিক্যাল ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। করোনাভাইরাস যদিও আল্লাহর রহমতে কমে আসছে! তবুও  ঠেকাতে হলে তার সঙ্গে লড়তে  ও সতর্কতা অবলম্বন করে যেতে হবে আমাদের। সবার সুস্বাস্থ্য আমরা রিএ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার পাশে আছি বরাবরই আপনাদের পাশে। তাছাড়াও
শরীরের  ব্যথা ও যে ব্যায়ামের সঠিক তথ্য জানা এবং সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং পরামর্শ পেতে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেওয়াই ভালো। সূত্র: বিভিন্ন তথ্য অবলম্বনে। 
লেখক ও পরামর্শক:
ডা. মো. সাইদুর রহমান 
চিফ কনসালট্যান্ট (ফিজিও)
রিএকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ৪০৭ ফিনিক্স টাওয়ার, ৬ষ্ঠতলা, সাতরাস্তা , তেজগাঁও ঢাকা।

প্রয়োজনে: ০১৭১৬-৪৫-৩২-০৫, ০১৯১৬-৭৩-৩৪-৪৫

বি আলো ইমরান