এফসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফয়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

এফসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফয়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সেতু আক্তার, ফরিদপুর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি:ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফয়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়ম,জালিয়াতি, আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়া ও গ্রাহকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রতিবাদে
মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা । ব্যাংকের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের আয়োজনেরবিবার সকাল ১১টায় ফরিদপুর জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করাহয়। এসময় বক্তব্য রাখেন উক্ত ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফররহমান, গ্রাহক হালিমা বেগম, শাকিলা,নুরজ্জাহান ও সাধনা রানীসহ ভুক্তভোগী অনেকে। এসময় গ্রাহক হালিমা বেগম জানান, তিনিএইব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলেন লাভসহ ৫৭ হাজার ৫০০শত টাকা পরিশোধ করতে হবে,তিনি ২৯ হাজার ৬৫০ টাকা জমা দিয়েছেন এখন তার নিকট ব্যাংক পাবে ২৮ হাজার ৫০০শত টাকা।

করোনার কারনে এই টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় ব্যাংক তার বিরুদ্ধে ১ লক্ষ ৪০ হাজার ১৪০ টাকা পাবে দাবী করে আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আর এক গ্রাহক আম্বিয়া বেগম বলেন, আমি ৩০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি লাভসহ ৩৪ হাজার ৫০০ ঠাকা পরিশোধ করতে হবে। আমি ১১হাজার ৭৫০ টাকা পরিশোধ করছি। ব্যাংক আমার কাছে পাবে ২২ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ ব্যাংক আমার বিরুদ্ধে ৩৫ হাজার ৫৮৮ টাকা দাবী করে মামলা করেছে, গ্রাহক শাকিলা আক্তার জানান, ২০ হাজার টাকা লোন নিয়ে লাভসহ পরিশোধ করেছি, এখন আমার বিরুদ্ধে ৩২ হাজার টাকা পাবে বলে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, গ্রাহক নুরজাহানের ও একই অবস্থা, গ্রাহক ওমর আলী অভিযোগ করে বলেন,আমি এফডিআর হিসেবে এই ব্যাংকে ৮৫ লক্ষ টাকা রাখি প্রথম কয়েক বছর মুনাফা দিলেও এখন মুনাফা দিচ্ছে না, এখন আমি লাভসহ এক কোটি ১৪ হাজার টাকা পাবো আমার টাকা দিচ্ছে না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও এসপি মহাদয়ের নিকট আকুল আবেদন করছি আমার টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেদিন। এমণ অভিযোগ অনেক গ্রাহকের। এদিকে অনেক গ্রাহক ইতি পুর্বে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর একাধিক অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। এসময় ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানও গ্রাহকদের পক্ষে মানববন্ধনে অংশ নেন । এসময় তিনি বলেন, ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো অপারেটিভ ব্যাংক কোন তফসিলি ব্যাংক নয়, ইহা স্থানীয় সমবায়ীদের ব্যাংক।

এই ব্যাংকে শুধু মাত্র নিবন্ধীত স্থানীয় সমবায় সমিতিই সদস্য হতে পারবেন এবং যে কোন লেন দেন করতে পারবেন। কিন্তু ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফয়েজ আহমেদ দীর্ঘ সময় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন কালে পুরাতন কয়েকশত নিবন্ধীত সমবায় সমিতি, যারা সদস্য ছিলেন তাদের বাদ দিয়ে তার পছন্দের মাত্র ৩২টি সদস্য রাখেন। এরপর সে তফসিলি ব্যাংকের নেয় সাধারন মানুষকে অধিক মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সদস্য করে এফডিআর ও আমানত নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন। যা সমবায় ব্যাংক পরিচালনা নীতিমালা বহিঃর্ভুত।

তিনি আরো বলেন, তাকে বারবার নিষেধ করলেও সে আমার কথায় কর্নপাত না করে নিয়মিত ভাবে আমানত ও এফডিআর নিতে থাকে। এদিকে আনেক আমানতকারীর মেয়াদ শেষ হলেও তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত দিচ্ছে না এবং আমানতের লাভও ঠিক মত দিচ্ছে না। এব্যাপারে অনেক গ্রাহক আমানতের টাকা ফেরত না পেয়ে ডিসি এসপির বরাবর আবেদন করেছে। এদিকে একটানা তিন মেয়াদের বেশি ব্যাংকের কোন পদে থাকা যায়না বিধায়, সে তার পছন্দের লোক দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে, যে কমিটিতে আমাকে সহ-সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে। যে কমিটি করা হয়েছে এই কমিটির এক সদস্য অন্য সদস্যকে চিনে না। কমিটির মেয়াদ দুই বছর পার হলেও এই কমিটির সকল সদস্যকে নিয়ে এ পর্যন্ত একটি সভাও হয়নি। শেখ ফয়েজ আহমেদ বর্তমান কমিটির কোন পদে না থাকলেও ব্যাংক ভবনের দুটি রুম দখল করে ব্যাক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সে-ই ছায়া হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করছে। তিনি ঐ
রুমে বসে ব্যাংক ভবনের সকল দোকান থেকে ভাড়া তুলে তার ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেন।

তিনি গত কয়েক বছর ব্যাংকের দায়িত্ব পালন কালে ব্যাংক ভবনের লক্ষ লক্ষ টাকা ভাড়া তুলে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে লাভবান হয়েছে। আমি তার এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাকে কোন নোটিশ বা কমিটির সভা না করে বহিস্কারের চিঠি পাঠিয়েছে এবং আমার বিরুদ্ধে হয়রানি মুলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এদিকে তার অনিয়মের বিষয় বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তর থেকে দুই দফা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম এসে তদন্ত করলে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পরে। তারা ব্যাংকটি দেউলিয়া হওয়ার আশংকা করছেন। এব্যাপারে শেখ ফয়েজ আহমেদ বিপদ আশংকা করে ঔ টিমের বিরুদ্ধে মামলা করে তদন্ত রিপোর্ট আটকে রাখে। তিনি গ্রাহকদের নিকট থেকে যে অর্থ নিয়েছে তা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন অনুমোদন নেই, সরকারি অডিটেও দেখানো হয়নি, কোন ব্যাংক একাউন্টেও জমা হয়নি। তিনি ব্যাংকের টাকা দিয়ে গাড়ী ক্রয় করে নিজ কাজে ব্যবহার করছেন। দায়িত্ব থাকাকালিন
গাড়ীর তেল ও গ্যারেজ ভাড়া বাবদ ভুয়া ভাউচার দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্বসাৎ করছে। তিনি ব্যাংকের কোন পদে না থেকেও ব্যাংকের গাড়ীটি তার দখলে রেখেছেন। ব্যাংকের ওয়েবসাইট বাবদ ৩ বার ভাউচার করে টাকা উত্তোলণ করেছে, কিন্তু অদ্যবধি ওয়েবসাইট খোলা হয়নি। প্রতি বছর ক্যালেন্ডার তৈরী করার নামে প্রচুর টাকা আত্বসাৎ করছে। এসময় বক্তারা অভিলম্বে শেখ ফয়েজ আহমেদকে গ্রেফতার করে, গ্রাহকের আমানত ফেরত এবং ব্যাংকটি দেওলিয়া হওয়া থেকে রক্ষার দাবী জানান। এব্যাপারে জেলা সমবায় অফিসার মোঃ আলম
হোসেন বলেন, ব্যাংক মামলা করছে এমন একজন গ্রাহক আমাকে জানিয়েছে, যেহুত মামলা হয়েছে বিষয়টি আদালতেই সমাধান হবে, তিনি আরো বলেন গ্রাহকের আমানতের টাকা দিচ্ছে না এব্যাপার তদন্ত চলছে, তদন্তের পরে বলা যাবে কি করা হবে।
বিআলো/শিলি