কক্সবাজারে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি

কক্সবাজারে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি

বাংলাদেশের আলো ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেমে থেমে তাণ্ডব চালাচ্ছে কক্সবাজারে। বিশেষ করে বিকেল থেকে এ তাণ্ডব শুরু হয়। সাগর উত্তালের সাথে সাথে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি।

ইতোমধ্যে কক্সবাজারের উপকূল থেকে ১৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার শহরের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে এখনো নিরাপদ আশ্রয়ে আনা যায়নি।

তবুও স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং ও সতর্কতা বার্তা অব্যাহত রেখেছেন। তবে কেউ না আসতে চাইলে তাকে জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

বুধবার (২০ মে) বিকেল ৩টা, শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডব। যা চলে ১০ মিনিট পর্যন্ত। এরপর আবারও বিকেল ৪টার দিকে শুরু হয় দ্বিতীয় দফা তাণ্ডব। বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া ও ঝড়ো বৃষ্টি। ঝড়ো বাতাসে ভেঙে যাচ্ছে গাছপালা। এরপর বিকেল ৫টায় তৃতীয় দফা শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। যা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে সাগর। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে আঘাত করছে উপকূলে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান কক্সবাজার উপকূল থেকে ৪৩০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। যার কারণে মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া, ঝড়ো বৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এটি সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে। বিশেষ করে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হতে পারে। তাই উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

এদিকে কক্সবাজার শহরের সমুদ্র উপকূলবর্তী ১০টি গ্রাম। যেখানে বসবাস করছে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব পড়লেও আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না এসব মানুষ। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকরা চালিয়ে যাচ্ছে মাইকিং ও সতর্কতামূলক প্রচারণা। তারপরও তাদের কথায় কান দিচ্ছে উপকূলের এসব মানুষ।

সমিতির পাড়ার বাসিন্দা মোস্তফা সরওয়ার বলেন, ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত শুনে এখন যদি আমরা শহরের উঁচু স্থানে চলে যায় তাহলে এখানে যে আমাদের সহায় সম্বল আছে সেগুলো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। এখানে থাকা সহায় সম্বলগুলো চুরি-ছিনতাই হয়ে যাবে।

চরপাড়ার শুক্কুর বলেন, ছোট বেলা থেকে ৮, ৯ ও ১০ সংকেত নিয়ে আমরা যুদ্ধ করছি। সুতরাং পরিস্থিতি এবং সংকেত আরও বাড়লে তারপর নিরাপদ আশ্রয় চলে যাব।

কুতুবদিয়ার পাড়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, একদিনে করোনা প্রভাব অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান দুটি ভয়াবহ। কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়ে কিছুই হবে না।

সময়ের সাথে সাথে ভয়াবহ হয়ে উঠছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। তারপরও লোকজন নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার কোন আগ্রহ নেই বলে জানালেন সিপিপির ১১ নং ইউনিয়নের টিম লিডার সিকাদার আবু জাফর।

তিনি বলেন, ৬ নং বিপদ সংকেত দেয়ার পর থেকে কক্সবাজার শহরের উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করছি। সাথে সাথে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বুঝানো চেষ্টা করছি ঘূর্ণিঝড় আম্পান বিষয়টি। কিন্তু তারপরও তারা আমাদের কথা শুনছেন না। বরং কেউ কেউ ঝগড়া শুরু করে দিয়েছেন। তারপরও আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে উপকূলের ১৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে। তাদেরকে করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। এখন যারা আসবে না তাদেরকে জোর করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হবে।

কক্সবাজারের ৮টি উপজেলায় ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ২২১টি স্কুল-কলেজকেও আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।