খালেদা জিয়ার মাঝে শিক্ষার আলো নেই: হানিফ

খালেদা জিয়ার মাঝে শিক্ষার আলো নেই: হানিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, মানবতার কারণে দণ্ড স্থগিত রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলেন। জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকীর দিনে মিথ্যা জন্মদিন পালন করে প্রতিহিংসা দেখিয়েছেন। শিক্ষা না থাকলে মানবিকতা থাকে না। খালেদা জিয়ার মাঝে যে শিক্ষার আলো নেই তা তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে “আগামীর বাংলাদেশ: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ (আইপি) টিভি।

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, শিক্ষার আলো মানুষের মধ্যে মানবিকতা তৈরি করে। বেগম খালেদা জিয়া এতটাই নিষ্ঠুর ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার পর পার্লামেন্ট রসিকতা করে উনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে কে মারতে যাবে? উনি নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে এই গ্রেনেড নিয়ে গেছেন। এত নিষ্ঠুর ছিলো তার রসিকতা। তারপরও জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবতা দেখিয়েছেন। কারণ তার মাঝে শিক্ষার আলো আছে।


তিনি বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার মাধ্যমে জাতি গঠন হয়। আমাদের সমাজে নীতি-নৈতিকতার অনেক অবক্ষয় হয়েছে। অনৈতিকতা প্রতিরোধ করার জন্য আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আমাদের এতই দূর্ভাগ্য, অনৈতিক কাজকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সেজন্য নতুন নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলো রোধ করার চেষ্টা করতে হচ্ছে। শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই নৈতিক শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষায় নীতি-নৈতিকতা শিখাতে পারলে আমরা এই অনৈতিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।

হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষাকে প্রাধাণ্য দিয়ে দেশ গড়ার ভাবনা করেছিলেন। যুদ্ধের পর সীমিত সম্পদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো শিক্ষককে সরকারিকরণ করেছিলেন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে গোটা জাতিকে সুশিক্ষিায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা হয়েছিলো। সেসময়ে আঘাতটা শিক্ষার ওপরও এসেছিলো। এরপর বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে প্রাইমারি, হাইস্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থার অধঃপতন ঘটেছিলো। মেধাহীন শিক্ষকদের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে।


আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা দেশে মেধা ধরে রাখতে পারি না। এই মেধাটা চলে যাওয়ার বড় একটি কারণ ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ কম পায়। তাই স্বাভাবিকভাবে বাইরে চলে যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনেকে আর দেশে আসেন না। আমরা তাদের কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি, প্রো-ভিসিদেরকে টেন্ডারের ব্যাপারেও সময় দিতে হয়। এসব হলে শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এটার পরিবর্তন হওয়া দরকার।


তিনি বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষাকে লাভজনক হিসেবে পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। পড়ালেখা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা বলা হয়। মানুষের সেবার মানসিকতা তৈরি করা হয় না। অর্থবিত্তের দিকে মানুষের লোভ থেকে আমাদের মধ্যে অনিয়ম, অনৈতিকতা বাড়ছে। শিক্ষা মনকে উন্মুক্ত করে। চিন্তা-চেতনার প্রসার করে জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে। তাই শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।


শিক্ষার আলো না থাকলে ধর্মান্ধতার সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা দরকার। যেসব বিষয় পড়লে আউটকাম আসবে, দেশের উপকার হবে সেসব বিষয় পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার চিন্তা করা দরকার। মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষায় যারা আছেন তাদেরকে নিয়ে হেফাজতে ইসলাম নানা কর্মকান্ড চালাচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এসবের কারণ একটাই তাদের মধ্যে শিক্ষার আলোটা পুরোপুরি পৌঁছাতে পারেনি।


জাগরণ আইপি টিভি’র প্রধান সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনা ও বিবার্তা২৪ডটনেট সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসী’র সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় কি-নোট উপস্থাপন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহম্মদ হুমায়ুন কবির। এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।

বিআলো/শিলি