জাতীয় বঙ্গবন্ধুর নামে হচ্ছে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর’

জাতীয় বঙ্গবন্ধুর নামে হচ্ছে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর’

কক্সবাজার প্রতিনিধি : বাংলাদেশকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতু বন্ধনকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। এজন্য দেশের সব আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিমানবন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। আর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

আধুনিকায়নের সঙ্গে নাম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমান বন্দরের। বিমানবন্দরটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’ করার প্রস্তাব দিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। গত ১৯ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাস্ট্রের সদস্য সচিবের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন।

জানা গেছে, সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের জন্য মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন চায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করতে হলে ট্রাস্টের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। গত মাসে এ সংক্রান্ত অনুমোদন দেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।

বর্তমানে দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরই প্রধান।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য কমল বিমানবন্দরের নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’ করার প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সদয় সম্মতি জানিয়ে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে মন্ত্রনালয়ে লিখিত আবেদন করার নির্দেশ দেন।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হয়। ইতোমধ্যে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬,৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট এবং প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নতীকরণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে সম্প্রসারিত রানওয়েতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময়ই এই বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট থেকে ১২ হাজার ফুটে উন্নতীকরণের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এজন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৭০৯৬০ দশমিক ৮৪ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট থেকে ১০৭০০ ফুটে উন্নীত হবে। এ ছাড়া প্রিসিশন এপ্রোচ ক্যাট-১ লাইটিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। ফলে উড়োজাহাজ পূর্ণ লোডে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। যার কারণে বিমানবন্দরের ফ্লাইট সংখ্যার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

বেবিচক জানিয়েছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ দেওয়া হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানকে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদর দফতরে বেবিচক কর্তৃপক্ষ ও চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটারওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউইবি)- চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) জেভি’র মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পটি গত ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন প্রদান করেন। ৫ হাজার ১ শ’ ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও শক্তি বৃদ্ধি, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।


বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ২৯ আগস্ট প্রকল্পের কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণের সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্প শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হবে।

বিআলো/শিলি