ঢাকা হচ্ছে ফাঁকা-গাঁয়ে হবে থাকা
এম হায়দার চৌধুরী, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ সারা দেশে ঢাকা
ফেরত মানুষের সংখ্যা দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রামে-গঞ্জে। এক সময়ের ঢাকামুখী লোকজন বৈশ্বিক করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন গ্রামে প্রত্যাবর্তনের প্রতিযোগিতা করছেন।
মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের লোকজন উপার্জনহীন হয়ে “নুন আনতে পান্তা ফুরায়” অবস্থায় উপনীত হয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যত শীঘ্র সম্ভব ঢাকা ত্যাগ করতে হবে। মাস গেলে বাড়ি ভাড়া, গ্যস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলসহ সংসার খরচ বহন করা এখন যেন “মরার উপর খাড়ার ঘা”। দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির প্রায় চারমাস পার হলেও এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের মানুষ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে চেয়ে আছে।
বৈশ্বিক করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে হাঁটছে গোটা বিশ্ব। পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো করোনা প্রতিরোধের কোন উপায় না পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে জগৎ বিখ্যাত দেশগুলোও এ ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমন ও বিস্তার থেকে জনগণকে নিরাপদে রাখতে দেশের জেলা উপজেলায় রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের সর্বত্র নিত্যআয়ের লোকজন কর্মের অভাবে উপার্জনহীন হয়ে চরম অর্থকষ্টের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন। বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের লোকজন। বিভিন্ন কর্মের লোকজন নিত্যআয় থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করছেন। বিশেষ করে রাজধানীর নিত্যশ্রমিক, রিকশা, সিএনজি, টমটম, ম্যাক্সি, পান দোকানী ও ফুটপাথের দোকানী থেকে শুরু করে কারখানার কর্মচারী কর্মকর্তাসহ সকল পেশার মানুষজন অতীব দুঃখ-কষ্টে, অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ চরম সংকট থেকে নিষ্কিৃতি পাওয়ার লক্ষ্যে বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে তিলে- তিলে গড়ে তোলা অনেক সাধের ঢাকার আবাস ত্যাগ করে গ্রামে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
তথ্যে জানা যায়, বিশ্বময় বিস্তৃত ব্যবসা সফল বহূজাতিক কল কারখানার মালিকরা তাদের ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে কর্মচারী কর্মকর্তাদের ছাটাই করার পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। বৈশ্বিক ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে এ শ্রমিক ছাটাই প্রবণতার জন্ম হয়েছে। ফলে সারা বিশ্বে কোটি কোটি কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও বিভিন্ন কল-কারখানার মালিকরা একই কারণে কর্মচারী কর্মকর্তাদের ছাটাই করছেন। এতে দেশে নিত্যআয়ের লোকজনের পাশাপাশি কল কারখানার শ্রমজীবী কর্মচারী কর্মকর্তারা ও পোষাক শিল্পে কর্মরতরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এতে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা ঢাকার বসবাস ত্যাগ করে গ্রামমুখি হচ্ছেন।
জানা যায়, সাম্প্রতিক রাজধানী ঢাকাসহ বড়বড় শহর নগরে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়ার অভাব অনুভব করছেন, বাড়িভাড়া হ্রাস করেও ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না তারা। আরও জানা যায়, গত কয়দিনে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন উল্লেখিত শহর নগরের ভাড়া বাসা ত্যাগ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। এতে গ্রামাঞ্চলসহ মফস্বল শহরগুলোতে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে গাঁয়ের মানুষ কর্মের খোঁজে শহরে যেতো, এখন শহরে কর্মহীন হয়ে গ্রামে প্রত্যাবর্তন যেন এক অশনি সংকেত। সম্প্রতি ঢাকার বসতি ছেড়ে গ্রামে আসা ফুটপাতের ব্যবসায়ী জলিল মিয়া জানান, গত দশ বছর যাবত ঢাকার ফুটপাতে ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। করোনাভাইরাসের কারনে রাস্তায় লোকজন না থাকায় তার ব্যবসা বন্ধ। উপার্জনহীন হয়ে গ্রামে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
মতিঝিলে প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করতেন সজল মিয়া, তার চাকরি আপাতত নাই, দেশের অবস্থা ভাল হলে আবার হতেও পারে। এ অনিশ্চয়তার দো’টানায় পড়ে ও কর্মহীন হয়ে তিনি এখন গাঁয়ে বসবাস করবেন বলে জানান। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন গ্রামমুখী হওয়াতে স্থানীয় পর্যায়ে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এতে গ্রামে-গঞ্জে কর্মহীন জনগণের সাথে শহর থেকে ফেরা কর্মহীন মানুষ যুক্ত হয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বিআলো/শিলি
মন্তব্য করুন