দখল-দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে নবাবগঞ্জের ইছামতি

দখল-দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে নবাবগঞ্জের ইছামতি

নবাবগঞ্জ দোহার ঢাকা প্রতিনিধি: ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী, কচুরিপানা আবর্জনাসহ দখল দূষণে মরতে বসেছে। বর্তমান মৌসুমে নদীটির বুক জুড়ে দেখা যাচ্ছে, কচুরিপানা ও বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা।

নদীটির বিভিন্ন  অংশে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে নদীর গতি পথ বন্ধ করে দেওয়াসহ প্রভাবশালীদের দখল ও দূষণে নদীটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী অনান্য নদীর মতো, এক সময়  ইছামতি ভূমিখেকোদের নিজস্ব সম্পদে পরিণত হতে পারে বলে মনে করেন এই অঞ্চলের সচেতন মানুষ। তাদের দাবি নদী কমিশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে দ্রুত ইছামতি নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া  হোক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার পাশে কালিগঙ্গা নদীর পরেই ইছামতির স্থান। দেশীয় মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণি বসবাস করতো এই নদীতে এক সময়। মানুষের দখল দূষণ ও অত্যাচারে নদীটিতে দেশীয় মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এছাড়া জীববৈচ্যিত হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন হাটবাজার ও প্রতিষ্ঠানের মলমূত্র ও বর্জে নদীটির তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েক বার খনন করা হলেও আবার নদীটি তার পূর্বের রূপে ফিরে  এসেছে। এ বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলা ও তৎপরতা না থাকায় নদীটির বিভিন্ন অংশ দখল ও দূষণের কবলে পড়ে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

এই অঞ্চলের প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় ইছামতির নৌপথ ব্যবহার করে, দোহার, নবাবগঞ্জ. মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের মানুষ নৌকা ও লঞ্চযোগে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতো। কালের বিবর্তন ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির ফলে, মানুষ ধীরে ধীরে নৌপথ ছেড়ে সড়ক পথে যাতায়াত শুরু করে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির মানুষ, নদীটিকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করতে যে যার মতো করে ব্যবহার শুরু করেছে। তাদের দাবি, নদীটি এখনো প্রাণ নিয়ে যেহেতু বেঁচে আছে। তাই নদীটি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইছামতি নদীটি বাগমারা বাজার এলাকা, সুরগঞ্জ, দীঘির পাড়, বক্স নগর, কলাকোপা পোদ্দার বাজার, বান্দুরা বাজার, কোমরগঞ্জ, চৌকিঘাটা, গাজীখালী, আগলা বাজার, টিকরপুর ছাতিয়া এলাকা, গালিমপুর ও গোবিন্দসহ কৈলাইল সাইলকা খেয়াঘাট এলাকায়, শিকারীপাড়া, বারুয়াখালীর বেশ কিছু স্থানে ব্যাপকভাবে কচুরিপানা আবর্জনাসহ দখল দূষণের কবলে পড়েছে। নদীটির এসব অংশে পানি এখন আর ঘরগৃহস্থালীর কাজে  ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে শুকিয়ে গেছে। কোথাও আবার হাঁটু সমান পানি রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ইছামতির পানি শূন্য স্থানগুলোই দখল করার পাঁয়তারা চলছে বিভিন্নভাবে। সম্প্রতি উপজেলার আগলা টিকরপুর এলাকায় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে নদীতে নির্মিত নতুন ভবনের অংশ বিশেষ ভেঙে দেয় উপজেলা প্রশাসন। ইছামতি নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও দখল দূষণের বিষয় নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  সালাউদ্দীন মনজু বলেন, উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখল ও দূষণ বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া নদীটির পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করতে খনন কার্যক্রম চলমান ।

অপরদিকে ইছামতি নদীর দখল ও দূষণের বিষয়ে নদী কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) কামরুন নাহার আহমেদ  বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে জাতীয় রক্ষা কমিশন সার্বক্ষণিক কাজ করে চলেছে।  এছাড়া দখল ও দূষণের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআলো/ইলিয়াস