পাঠ্যসূচির পুনর্বিন্যাসে তিন বিকল্প প্রস্তাব

পাঠ্যসূচির পুনর্বিন্যাসে তিন বিকল্প প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোভিড-পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রমের নীতি-কৌশল চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু হয়েছে। আজ বিকালে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে নীতিনির্ধারণী সভা হবে। এছাড়া ময়মনসিংহের প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিতে (নেপ) প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর পৃথক আরেকটি কমিটির কাজ চলছে।

 

পিইসিসহ প্রাথমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে খুলতে পারলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা ছিল। কিন্তু পাঠদানের সেই সময়টা পাচ্ছি না। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এতে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারীকে বিবেচনায় নিয়ে জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন বিকল্প নিয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভাবছে।

 

প্রসঙ্গত, মহামারীর কারণে এ বছর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী বা পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে প্রস্তাব এসেছে। এরই আলোকে আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে দুই মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে।

 

বি আলো/মুন্নী

এনসিটিবিতে বৈঠক : সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের করোনা-পরবর্তী শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য তিনটি বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করছে এনসিটিবি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর সম্ভাব্য কর্মদিবস ধরে তৈরি করা হচ্ছে এ প্রস্তাব। সে অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩০ দিন শ্রেণি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হলে পাঠ্যবইয়ের কতটুকু অংশ পড়ানো হবে, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। এছাড়া ৫০ এবং ৭৩ কর্মদিবস সময় পেলে কতটুকু পড়ানো যাবে, তাও চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ১৭ আগস্ট শেষ হবে এই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কার্যক্রম।

জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ আছে। কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে, তা নিশ্চিত নয়। এ কারণে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা গেলে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষার আগে ৭৩টি কর্মদিবস পাওয়া যায়। এই সময়ে গোটা পাঠ্যবই পড়ানো সম্ভব নয়। তাই সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পাঠ্যসূচি (সিলেবাস) পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আবার ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই আরও দুটি বিকল্প প্রস্তাব করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৫০ ও ৩০ কর্মদিবস হিসাব করে প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। এতে আলাদা কর্মদিবসে পাঠ্যসূচির কতটুকু পড়ানো সম্ভব, সেটা ‘রিডিজাইন’ (পুনঃরূপায়ণ) করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করে পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাসে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাসে শিক্ষার্থীর বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন এবং কারিকুলামের শিখনফলকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, তাই পরবর্তী শ্রেণির পাঠের সঙ্গে আগের শ্রেণির পাঠের সংযোগ স্থাপনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে গণিতে ‘ভগ্নাংশ’ পড়ানো হয়। আর সপ্তম শ্রেণিতে শেখানো হয় সরল অঙ্ক।

এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভগ্নাংশ পড়ানো অত্যাবশ্যক। এটা রাখা হচ্ছে সম্ভাব্য কর্মদিবসভিত্তিক প্রস্তাবে। আর কোনো কারণে কোনো পাঠ যদি বিকল্পে ঠাঁই না পায়, তাহলে তা পরের শ্রেণিতে পড়ানো হবে। এ নিয়ে আগামী বছর আলাদা নির্দেশনা তৈরি করা হবে শ্রেণি শিক্ষকদের জন্য।

জানা যায়, বুধবার এনসিটিবি ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছয়টি করে ১৮ বিষয়ের পাঠ্যসূচির ওপর কাজ শুরু করেছে। এগুলো হচ্ছে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। বিষয়গুলোর ওপর কাজ আজ শেষ হবে। ১৬ ও ১৭ আগস্ট এই তিন শ্রেণির ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয়ের ওপর কাজ চলবে। এই তিনটি শ্রেণিতে চার ধর্মের ওপর ১২টি পাঠ্যবই আছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, নিম্ন মাধ্যমিকের তিনটি শ্রেণির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাসের কাজ চলছে। নবম শ্রেণির বিষয়ে কোনো কাজ করছি না। কেননা নবম শ্রেণিতে বছরের অবশিষ্ট কর্মদিবসে পাঠ্যবইয়ের যতটুকু পড়ানো যাবে সেটুকুর ওপরই বার্ষিক পরীক্ষা হবে। এই স্তরের পাঠ্যসূচি দুই বছরের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ বছর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা আগামী বছর বা দশম শ্রেণিতে পড়বে। আর দশম শ্রেণিতে যারা আছে, তাদের অবশিষ্ট পাঠ শেষ করে পরীক্ষা নেয়া প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি : জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা সম্পর্কে বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, জেএসসি পরীক্ষা বাতিল বা এইচএসসি পরীক্ষার তারিখের বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের কথা বিবেচনায় নিয়ে শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে চার সচিবের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পিইসি এবং জেএসসিসহ পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এ বছরের জন্য বাতিলের প্রস্তাব সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীকে বিবেচনায় নিয়ে জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা তাদের পর্যবেক্ষণসহ কিছু বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে। কোভিড-১৯ মহামারীকে বিবেচনায় নিয়ে জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন বিকল্প নিয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভাবছে।

প্রতিমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক ব্রিফিং : বুধবার তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, এ বছর পিইসি পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা থেকে এখনও সরে আসেনি মন্ত্রণালয়। তিনটি বিকল্প মাথায় রেখে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে আগামী সপ্তাহে পাঠানো হবে। সমাপনীর বদলে আপাতত ‘অটো পাসের’ চিন্তাও নেই। আমরা সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। উনি যেটি অনুমোদন করে দেবেন, সেটি বাস্তবায়ন করব।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা আছে। এই পরীক্ষাটা নিতে হলে আমাদের পাঠদানের যে সময় আছে, সেই সময়টা পাচ্ছি না। আমরা সেপ্টেম্বরের দিকে যদি স্কুল খুলে দিতে পারতাম, তাহলে শর্ট সিলেবাসে একটা পরীক্ষা (পিইসি) নেয়ার চিন্তাভাবনা ছিল। আমরা শর্ট সিলেবাস করে পরীক্ষাটা নেব, নাহলে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা হবে না। আবার যদি তা না হয় (সেপ্টেম্বরে না খোলে), অক্টোবরের দিকে খোলে, তাহলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি কি না।

যদি সম্ভব হয় তাহলে এমসিকিউ করতে পারি ৫০ নম্বরের। এগুলো আমাদের চিন্তাভাবনা। পরীক্ষা (পিইসি) আমরা রাখব, পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে স্কুল খুলতে পারব কি না, তা বলতে পারছি না। অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে খুললে তখন কী অবস্থা হবে- আমরা একটা মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্কুলে স্কুলে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অক্টোবরে না খুললে নভেম্বরে খুলবে, নভেম্বরে না খুললে তখন বিকল্প ব্যবস্থা নেব।’