মুনিয়ার ডায়েরিতে শারুন: বিকৃতি ও কাটাছেঁড়া 

মুনিয়ার ডায়েরিতে শারুন: বিকৃতি ও কাটাছেঁড়া 

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুনিয়ার যে সমস্ত ডায়েরি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে সেই সমস্ত ডায়েরিগুলোতে কাটাছেঁড়া এবং বিকৃত করা হয়েছে। মুনিয়ার বোন নুসরাত এই ডায়েরিগুলো হস্তগত করেন মুনিয়ার মৃত্যুর পর। হস্তগত করে তিনি তার নিজের ইচ্ছেমতো এই ডায়েরিগুলোতে কাটাছেঁড়া করেছেন।

একাধিক জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে, শারুন নামটি কেটে অন্য একটি নাম বসানো হয়েছে। আর এই রকম কাটাছেঁড়া করার কারণে মুনিয়া যাকে উদ্দেশ্য করে তার আবেগ এবং অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছিলেন সেটি অন্য একজন ব্যক্তির নামে প্রচারণা করা হচ্ছে। ডায়েরিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ডাইরির পড়তে পড়তে মুনিয়ার আবেগ, উচ্ছ্বাস, প্রেম হারানোর বেদনা ছিল। প্রশ্ন উঠেছে কাকে উদ্দেশ্য করে মুনিয়া এ সমস্ত আবেগ ছড়িয়েছিলেন। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, নুসরাত এই ডায়েরিগুলোকে কুক্ষিগত করে এই ডাইরিতে কিছু কিছু কথা কিছু কিছু শব্দ পাল্টে ফেলেছেন। এই ডায়েরিগুলো এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তগত হয়েছে। তারা দেখছেন যে, ডায়েরিগুলোতে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে এবং যে সমস্ত জায়গায় কাটাছেঁড়া করা হয়েছে সেখানে নতুন লেখাগুলোর সঙ্গে মুনিয়ার লেখার মিল নেই। অনেক ফাঁকা জায়গায় শব্দ বসানো হয়েছে। এগুলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, একজন ব্যক্তির সঙ্গে মুনিয়ার দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল এবং সেই প্রেমের ব্যর্থতা, প্রতারণা ইত্যাদি নিয়ে তিনি আবেগ প্রকাশ করেছেন। এসব নিয়ে তার দুঃখবোধও ছিল। কার সঙ্গে তার প্রেম ছিল? মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত প্রচারের চেষ্টা করছেন এই প্রেম ছিল মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার আসামির সঙ্গে। 

কিন্তু এই ডায়েরিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে এর ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় শারুনের নাম এসেছে। শারুনের সঙ্গে তার গভীর একটি প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তাকে বিভিন্ন সময়ে প্রতারিত করেছে। টাকা দিতে চেয়ে টাকা দেয়নি। দেখা করতে চেয়ে দেখা করেনি। বিয়ে করতে চেয়ে বিয়ে করেনি। এই বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই মুনিয়ার ডায়েরিতে একাধিক পাতা রয়েছে, যেখানে মুনিয়া হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং তিনি তার ভালোবাসার স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য শারুনকে দোষারোপ করেছেন। কিন্তু নুসরাত তানিয়া খুব কৌশলে সেই ডায়েরি থেকে শারুনের নামটি কেটে দিয়েছেন এবং ডায়েরিতে শারুনের নামটি এমনভাবে কাটা হয়েছে যেন নামটি কিছুতেই উদ্ধার করা না যায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেখছে যে, ডায়েরির মধ্যে বিভিন্ন রকম অসংগতি রয়েছে। প্রথমে তারা মনে করেছিল এই অসংগতির মূল কারণ মুনিয়া অল্প বয়সি। একেক সময় তার একেক আবেগ, একেক অনুভূতি হয়েছে, সেই অনুভূতি নিয়েই সে একেক সময় একেকটা কথা লিখেছে। 

মুনিয়ার ডায়েরিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একাধিক প্রেমিক ছিল, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক মুনিয়ার ছিল এবং প্রত্যেকটি সম্পর্কের মধ্যেই ঘাত-প্রতিঘাত এবং টানাপোড়ন ছিল, বিশ্বাসভঙ্গ ছিল। এই অল্প বয়সেই মুনিয়া শারুন, সম্রাটসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িয়েছিল এবং সেই সমস্ত সম্পর্কগুলো পরে নষ্ট হয়ে যায়। এটি নিয়ে তার মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং আবেগ ছিল। বিশেষ করে শারুনের প্রতারণা এবং তাকে ব্যবহার করা নিয়েই মুনিয়া তার ডায়রিতে অনেক বেশি কথা লিখেছেন। যেই কথাগুলোকেই এখন মামলার বাদী অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

এটাকে বলা হয় ফ্যাক্ট টেম্পারিং এবং এই কাটাছেঁড়া এবং তথ্য বিকৃতি, একটি শব্দ বসিয়ে বি নতুন একটি বাক্য জুড়ে দিয়ে পুরো ঘটনাটাকে অন্য দিকে মোড় নেওয়ানোর যে ষড়যন্ত্র, সেই ষড়যন্ত্রটি নুসরাত তানিয়া করেছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, মুনিয়ার মৃত্যুর পর ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ডায়েরি নুসরাতের কাছে ছিল এবং এই সময়েই ডায়েরিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির একটি চ্যানেলে এই ডায়েরিগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে। যদিও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী এরকম ডায়েরি প্রকাশ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই ডায়েরিতে তথ্য বিকৃতি একটি ফৌজদারি দণ্ডনীয় অপরাধ এবং সেই অপরাধটি করেছেন নুসরাত।

বিআলো/ইলিয়াস