ঐতিহাসিক খঞ্জনদিঘী মসজিদে যাওয়ার  রাস্তা নেই মুসল্লিদের

ঐতিহাসিক খঞ্জনদিঘী মসজিদে যাওয়ার  রাস্তা নেই মুসল্লিদের

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক সোনমসজিদ  এলাকায় প্রায় ৫শ ৪০ বছর আগে খঞ্জন দীঘি মসজিদ নির্মিত হয়। কিন্তু ঐ মসজিদে মুসুল্লি বা বহিরাগত দর্শনার্থীদের যাওয়া আসার জন্য নেই কোনা রাস্তা। গত ৫শ ৪০ বছরেও প্রত্নতত্ব বিভাগ রাস্তার ব্যবস্থা করেননি।

ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদটি সোনামসজিদ স্থল বন্দরের ৪ নং গেট থেকে দক্ষিন দিকে ৪শ গজ ভিতরে অবস্থিত। কাস্টমস অফিস মোড় থেকে পূর্ব দিকে আধা-মাইল পর বালিয়াদীঘি গ্রামের দিকে ৪০ গজ দূরুত্বে এক গম্বুজ বিশিষ্ট খঞ্জন দীঘি মসজিদ।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে ঐ মসজিদটি সংস্কার করে নামাজিদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ঐ মসজিদ এলাকার জঙ্গলে ভরপুর ছিলো। প্রত্নতত্ব বিভাগ স্বাধীনতার পর ঐ সব জঙ্গল পরিস্কার করে ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদ ও দিঘীটি উন্মুক্ত করে দেয়। বর্তমানে দেশের বিভিন স্থান থেকে প্রতি বছর বহিরাগত দর্শনার্থী ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদটি দেখতে আসেন।

এছাড়াও নিয়মিত স্থানীয়রা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থেকেন। কিন্তু ঐ মসজিদে যাতায়াতের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তা। সেই কোনো সরকারি রাস্তা নেই। ঐ এলাকার জমির মালিকেরা ব্যাড়া দিয়ে নিজ জমি ঘেরে নেওয়ায় বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন থেকে সরকারের সর্বচ্চ প্রশাসনের বহু কর্মকর্তারা এই ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদ পরিদর্শন করলেও মাত্র চার (৪শ) গজ রাস্তার কোন ব্যাবস্থা করেননি। এলাকাবাসি, মুসুল্লি, পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংকের কয়েক জন কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল, কামাল হোসেন ও বহিরাগত দর্শনার্থীদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও সুমাইয়া সাবিল ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদটির যাতাযাতের জন্য জমি হুকুম করে রাস্তা তৈরি করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

উপরোক্ত রাস্তার ব্যাপারে শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ তোজাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঐ সমস্যার ব্যাপারে ইতির্পূবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ চৌধুরী রওশন ইসলামকে অবহিত করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারঃ মো সাকিব-আল-রাব্বি এর সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নতুন এই উপজেলায় যোগদান করেছি। এ রাস্তার সমস্যার ব্যাপারে সরজমিনে গিয়ে রাস্তার করনের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হকের সাথে মুঠোফোনে ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদের চলাচলের জন্য রাস্তার সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাস্তা না থাকলে অবশ্যই রাস্তা করনের ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের সাথে যোগাযাগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আগে জানা ছিলো না তাবে জরুরী ভিত্তিতে ঐতিহাসিক খঞ্জন দীঘি মসজিদে যাতায়তের জন্য রাস্তার তৈরি ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

খঞ্জন দিঘী মসজিদটি অনুমানিক ১৪৮০ সালের দিকে কোন এক রাজবিবি নির্মাণ করেন বলে ঐতিহাসিকেরা ধারণা করেন। অনেকে মনে করেন, এটি সুলতান ইলিয়াস শাহের আমলের নির্মিত একটি মসজিদ। ২০০৪-২০০৫ সালে প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর এর উদ্যোগে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ওই সংস্কারের পর এর অলংকরণ ও অঙ্গসজ্জা দারুণভাবে প্রস্ফূটিত হয়েছে। মসজিদটি পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪২ ফুট। মসজিদে সর্বমোট ৭টি দরজা রয়েছে। পূর্ব দিকে ৯.৬ ফুট মাপের একটি বারান্দা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কথিত রয়েছে, মসজিদটি দুর্ভেদ্য জঙ্গলে আবৃত ছিল এবং হিং¯্র জীব-জন্তুর আড্ডা ছিল এখানে। বড় বড় অজগর সাপের নিবাস ছিল এ মসজিদ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে জঙ্গল পরিষ্কার করলে মসজিদের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। মসজিদের ভেতরে ছিল চামচিকার রাজত্ব। চামচিকার দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে থাকতো, যার কারণে এ  এলাকায় কেউ যেতো না। এ কারণে স্থানীয়রা সাধারণভাবে মসজিদটিকে ‘চামচিকা মসজিদ’ নামে অভিহিত করে থাকে। আবার কেউ কেউ একে ‘রাজ বিবি মসজিদ’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এটা খঞ্জন দীঘি মসজিদ। এর পূর্ব প্রান্তে বিশাল আকারের একটি পুকুর রয়েছে। যা খঞ্জন দীঘি নামে পরিচিত।

মসজিদটি সম্পর্কে এলাকাবাসি, মুসুল্লি ও বহিরাগত দর্শনার্থীরা বলেন, মসজিদটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। এমনকি মসজিদে যাতাযাতের জন্য কোনো সরকারি কাচাঁ পাঁকা রাস্তার ব্যাবস্থা হয়নি। সাধারন জমির উপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। যদি এ মসজিদ সম্পর্কে সরকারি উদ্যোগে গবেষণা করা হতো তাহলে দর্শনার্থীরা এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারতো।

কয়েক জন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন বলেন, একটি ঐতিহাসিক মসজিদে যাতাতের জন্য প্রশাসন আদো কোনো রাস্তার ব্যবাস্থা করেনি। অন্যদিকে দীঘির পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে প্রত্তœতত্ত¡ বিভাগের এসব বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।
 

বিআলো/শিলি