৬৪ বছরের ফুলমতি কত বয়সে বয়স্কভাতা পাবেন

৬৪ বছরের ফুলমতি কত বয়সে বয়স্কভাতা পাবেন

জায়েদ হোসেন খন্দকার, রূপগঞ্জ : ‘এই বছর না সেই বছর, মানুষ বাঁচে কয় বছর। আর কয় দিন না বাচুম গোবাজান, কখন যে পরপারের ডাক আসে জানি না। বয়স তো ৬০ পার হয়ে গেছে আরো কয়েক বছর আগেই।হুনছি ৬২ বছর হলে নাকি নারীদের বয়স্কভাতা দেয়।  আমি তো বাজান এহনও কিছুই পাইলাম না’ মনের দুঃখে ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন ফুলমতি বেগম। 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফুলমতি। এই বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকার জন্য তিনি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ঘুরছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। শুদু আশ্বাসই মেলে, এ বছর না আগামী বছর। তারপর বলে পরের বছর আইয়েন। এভাবে কয়েক বছর ঘুরেও কেউ তার জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২ আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী ফুলমতিবয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। বয়স ৬৪ পেরিয়ে ৬৫ ছুঁইছুঁই। তারপরও বিধবা ফুলমতি বেগম পাননি বয়স্ক ভাতার কার্ড। স্বামীহারা ফুলমতি এই বৃদ্ধ বয়সে অর্থের অভাবে নানা সংকটে ভুগছেন। বয়সেরভারে রোগেশোকে তিনি ভারাক্রান্ত। চিকিৎসা তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবা জোটানোও তার জন্য কষ্টকর।

এলাকাবাসীরা জানান, ৩০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ফুলমতির স্বামী আবদুল খালেক নিহত হন। দিনমজুর স্বামীর সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না। পরে ফুলমতি এক ছেলে ও এক মেয়ের মুখে খাবারতুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। দুই বছরের ছেলেটি তখন সবে হাঁটাহাঁটি করতে শিখেছে, তবে এক বছরের মেয়েটিকে বিছানায় রেখেইতাকে সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো। কাজ করতে গিয়ে সন্তানদের আর যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়নি। সকালে ঘর থেকে বের হয়ে সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে বিকেলে খাবার নিয়ে ঘরে ফিরতেন তিনি। অযত্নে একসময় ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায় তার ছোট মেয়েটি। স্বামীর শোক কাটতে না কাটতে মেয়েকেও হারান তিনি। এরপর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতে থাকে ফুলমতির। এখন তার ছেলে আলম মিয়া নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলেটি সংসার চালাতে হিমশিম খেলে বৃদ্ধ বয়সে সংসারেএকটু বাড়তি সহযোগিতা করতে ফুলমতি শাক তুলে বিক্রি করতে শুরুকরেন। কিন্তু বয়সের ভারে আর তেমন কাজ করতে পারেন না। বৃদ্ধা ফুলমতি বলেন, ‘গায়ে শক্তি পাই না বইলা মানুষ আর কামে রাখে না। আমি অনেক মেম্বারের কাছে গেছি। কেউ আমার জন্য কিছু করে নাই। আমি খুবই অসহায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের কাছে শুনছি, ইউনু (ইউএনও) স্যার অসহায় মানুষের জন্য বয়োষ্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা কইরা দেন। যদি আমার জন্য একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন, তবে আমি শান্তি পামু।’এ বিষয়ে রূপগঞ্জের ইউএনও মমতাজ বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধা ফুলমতি যাতে বয়স্ক ভাতা পেতে পারেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।